আনিস তপন: [২] রোববার থেকে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা (কেøাজ প্রটেকশন), চলাচল পথের নিরাপত্তা (ভেহিকুলার মুভমেন্ট) ও সড়কে সুরক্ষা (রুট প্রটেকশন) দিতে আনসার বাহিনীতে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

[৩] ২০১৬ সালে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলার দুই মাস পর বিদেশি দূতাবাস ও রাষ্ট্রদূতদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি ডিভিশন সদস্যদের প্রত্যাহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব ও ভারতীয় দূতাবাসে চিঠি পাঠায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাছাড়া রাষ্ট্রদূতদের চলাচলেও এই ইউনিটের সদস্য দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তা দেয়া হত। সেসময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠিতে পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার করে দূতাবাসের নিরাপত্তায় আনসার সদস্যদের নিয়োগ দেয়ার বিষয় উল্লেখ করা হয়। এরই ধারাবহিকতায় সম্প্রতি পুলিশ সদস্যদের পরিবর্তে আনসার বাহিনীর বিশেষায়িত সদস্যদের দিয়ে রাষ্ট্রদূতের এসকর্ট সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

[৪] সংকটকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আনসার বাহিনীতে আনসার গার্ড ব্যাটেলিয়ন (এজিবি) ইউনিট গঠন করা হয়। এই ইউনিটের সদস্যদের কুইক রেসপন্স প্রশিক্ষণ, স্পেশাল ট্যাকটিক্যাল প্রশিক্ষণ ও স্পেশাল প্রোটেকশন প্রশিক্ষণ, বিশেষ অস্ত্র ও ট্যাকটিক্যাল প্রশিক্ষণ কোর্সের মাধ্যমে অত্যন্ত দক্ষ আনসার সদস্য হিসেবে গড়ে তোলা হয়। এই বাহিনীকেই নিরাপত্তার জন্য নিয়োগের প্রস্তাব দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।  

[৫] সূত্রটি জানায়, কিছুদিন আগে রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তায় আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্যরা যোগ্য, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কি না; সে বিষয়ে দূতাবাসের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ দল পর্যবেক্ষণ করেন। এসময় তারা আনসার সদর দপ্তর, ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যদের প্রশিক্ষণ, অপারেশনাল দক্ষতাসহ অন্যান্য সক্ষমতা যাচাই-বাছাই করেন।

[৬] যাচাই-বাছাইকালে একজন ভিআইপিকে চলাচলে সময় এবং ভেন্যুতে কিভাবে ঘনিষ্ঠ দৈহিক নিরাপত্তা দেওয়া হয়, ভিআইপির ওপর অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করলে বা কাছ থেকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করলে কিভাবে সুরক্ষা নিশ্চিত করবে, ভেন্যুত ইমার্জেন্সি কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে, দুর্ঘটনা ঘটলে কিভাবে ভিআইপিকে সুরক্ষিত রাখবে, হঠাৎ অসুস্থ পড়লে কিভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে, শত্রুর আক্রমণের প্রেক্ষিতে কিভাবে ভিআইপিকে নিয়ে ভেন্যু ত্যাগ করবে এবং কিভাবে শত্রুর মোকাবেলা করে ভিআইপিকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসবে এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করেন মার্কিন দূতাবাসের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ দল। তাছাড়া ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যদের শারীরিক দক্ষতা ও পরিসীমা কার্যকারিতার পরীক্ষা নেওয়ার পর মার্কিন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ দল রাষ্ট্রদূতের চলাচল পথের নিরাপত্তা ও সড়কে সুরক্ষা দিতে ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যদের মোতায়েনে সম্মতি দেয়। এরপর চলতি মাসে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর পক্ষে পরিচালক (অপারেশনস) এবং মার্কিন দূতাবাসের পক্ষে আঞ্চলিক নিরাপত্তা কর্মকর্তা সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) স্বাক্ষর করেন।

[৭] এমওইউ স্বাক্ষরের পর সম্প্রতি ১৬ জন আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য মাার্কিন দূতাবাসের ২ দিনের ওরিয়েন্টেশন কোর্সে অংশ গ্রহণ করেন।

[৮] জানা গেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী; কোনো দূতাবাস যদি অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য প্রশিক্ষিত একজন আনসার সদস্যকে নিতে চায়, তাহলে মাসে ৩০০ মার্কিন ডলার বা ৩৩ হাজার টাকা (প্রতি ডলার ১১০ টাকা হিসাবে) খরচ করতে হবে। দূতাবাসগুলো অতিরিক্ত নিরাপত্তার কাজে আনসার ব্যাটালিয়ন থেকে গাড়িও ভাড়া নিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে একটি গাড়ির জন্য প্রতি মাসে ১ হাজার ডলার বা ১ লাখ ১০ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। তবে শর্ত হলো, গাড়ির জ্বালানি খরচ দিতে হবে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস বা সংস্থাকে। তবে দূতাবাস বা সংস্থাগুলো এর বাইরে যদি কোন লজিস্টিক সাপোর্ট নিতে চায়; তবে আনসার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তার ফি নির্ধারণ করবে। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব